আমার আম গাছের কা- ও ডাল দিয়ে আঠা বের হচ্ছে। আমার করণীয় কী ?


উত্তর সমূহ

  1. সৈয়দা সিফাত জাহান, অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য), লালমনিরহাট

    আমের আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক (Gummosis and sudden decline) আম গাছের গামোসিস বা আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক রোগ ও তার প্রতিকারে করনীয়: বর্তমানে আম গাছের যে সমস্ত রোগ দেখা যায় তাদের মধ্যে আমের আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক অন্যতম । বর্তমানে সব জেলাতেই এ রোগটির আক্রমন পরিলক্ষিত হচ্ছে । বিজ্ঞানী এবং আম চাষীদের মতে, আম গাছের গামোসিস বা আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক সবচেয়ে মারাত্মক । কারণ এ রোগটি ছোট বড় সব বয়সী গাছেই আক্রমন করে এবং আক্রান্ত গাছ খুব অল্প সময়ের মধ্যে মারা যায় । গবেষনায় দেখা গেছে যে গামোসিস বা আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক রোগে আক্রান্ত বড় একটি গাছ (৫০ বছরের উর্ধে বয়স) ৩-৬ মাসের মধ্যেই মারা যায়। রোগের কারণ: এক প্রকার ছত্রাকের কারনে এ রোগটি হয়ে থাকে । রোগের লক্ষণঃ ১. প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত গাছের কান্ড বা ধড় বা শাখাপ্রশাখার কিছু কিছু জায়গা থেকে ক্ষুদ্র বিন্দুর মত হালকা বাদামি থেকে গাঢ় বাদামি বা কালো রঙের আঠা বা রস বের হতে থাকে । ২. আক্রমন বাড়ার সাথে সাথে কান্ড এবং শাখা-প্রশাখার অনেক স্থানথেকে আঠা বা রস বের হতে থাকে । আক্রান্ত ডগাটির কোষ বিবর্ণ হয়ে উঠে। আক্রান্ত গাছের ডগা এবং শাখাপ্রশাখা লম্বালম্বিভাবে কাটলে বাদামী লম্বা দাগের নজরে পড়ে । বেশী আক্রান- ডগা বা ডালটি অল্প দিনের মধ্যেই মারা যায়। এ অবস্থায় মরা ডালে পাতাগুলো ডগায় আঁটকে থাকে । ৩. কোন কোন ক্ষেত্রে পাতাগুলো কিছুদিন পর ঝরে পড়ে । কিছুদিন পর দেখা যায় আরেকটি ডাল একই ভাবে মারা যাচ্ছে। এভাবে এক পর্যায়ে সম্পূর্ণ গাছ মারা যেতে পারে। ৪. এ রোগটির উল্লেখযোগ্য একটা বৈশিষ্ট হচ্ছে যে সব গুলো ডাল একসাথে মারা যাবে না । একটা একটা করে পর্যাযক্রমিক ভাবে আক্রান্ত হবে এবং মারা যাবে । সবশেষে সম্পূর্ণ গাছটিই মারা যাবে প্রতিকার: ১. আঠা বা রস বের হওয়ার স্থানের ছাল/বাকল কিছু সুস্থ অংশসহ তুলে ফেলে দিয়ে উক্ত স্থানে বোর্দো পেষ্টের ( ১০০ গ্রাম তুঁতে ও ১০০ গ্রাম চুন ১ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে পেষ্ট তৈরী করা যায়) প্রলেপ দিতে হবে। ২. গাছে আক্রান্ত বা মরা ডাল পালা থাকলে তা কিছু সুস্থ অংশসহ কোটে ফেলতে হবে । কাটা ডাল পালা গাছের নীচে জমা না রেখে যত শীগ্র সম্ভব পুড়ে ফেলতে হবে। কাটা অংশে বোর্দো পেষ্টের প্রলেপ দিতে হবে। ৩. যে সকল গাছে পেষ্টের প্রলেপ দেওয়া সম্ভব না সেক্ষেত্রে বোর্দো মিকসার অথবা কপার অক্সিক্লোরাইড জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন- কুপ্রাভিট প্রতি লিটার পানিতে ৭ গ্রাম হারে মিশিয়ে সেপ্র্র করতে হবে ৪. গাছে নতুন পাতা বের হলে মেনকোজেব গ্রূপের ছত্রাকনাশক যেমন-ডায়থেন এম ৪৫/ পেনকোজেব/ইন্ডোফিল/কাফা ইত্যাদি প্রতি লিটার পানিতে ২-৩ গ্রাম হারে অথবা কার্বেন্ডাজিম গ্রূপের ছত্রাকনাশক যেমন- ব্যভিষ্টিন প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে ৭-১০ দিনের ব্যবধানে ৩/৪ বার সেপ্র্র করতে হবে। ৫. আক্রান্ত গাছে পর্যাপ্ত পরিমান গোবর /আবর্জনা পঁচা/ কম্পোসট এবং রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে এবং নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে ।